৪/০৭/২০১৯ রাত ২.৪১ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ১ম টার্মিনালের পাশে বসে আছি ২.৩৭ এ ইমিগ্রেশনের জন্য আব্বু ভিতরে ঢুকল খুবই খারাপ লাগছিল; ভাবলাম ফ্লাইট শেষেই একবারে বাসায় যাবো কত রাতই তো ঘুমোলাম একটা রাত না ঘুমোলে কি!; অপেক্ষা করছিলাম ; বিভিন্ন শ্রেনীর মানুষ আসছে…. কেউ কানাডা কেউ অস্ট্রোলিয়া কেউবা আবার বাহরাইন,লিবিয়া ; কেউ হাসি মুখে বিদায় নিচ্ছে আর কেউ……. পাশের কেউ একজন বলল কাঁদছে ; আমি বললাম এ আর নতুন কি!! কিন্তু ব্যাপারটা হলো যারা কাঁদতেছে ৪-৫ জনের দল তাদের এভারেজ বয়স ১৫-১৬ এরা সবাই দেশের বাইরে যাচ্ছে???!! শুধু একটা গ্রুপ নয় আরো কয়েকটি গ্রুপ দেখলাম কোন গ্রুপ বিয়ে করেছে সদ্য ১মাস বউ কে নিয়ে বিমানবন্দরে ঘুরতে আসেনি বউ ভেজা ভেজা চোখে বিদায় জানাতে এসেছে কিন্তু কাঁদছে না! অবাক করার বিষয় হলো আমরা কতটা দরিদ্র!!!! ১৫ বছরের একটা ছেলে রোজগার করার জন্য লক্ষ টাকা খরচ করে হাজার হাজার মাইল দূরে যাচ্ছে!! পৃথিবী কতটা নির্দয়!! ফরয ইবাদত পালনের জন্য মাত্র ৪৫ দিনের জন্য আব্বু যখন জাস্ট ভিতরে ঢুকল তখন কতটা কষ্ট লেগেছে তা বলে বুঝাবার নয় ; অথচ ১৫ বছরের একটা ছেলে তার উচ্ছৃঙ্খল জীবন ছেড়ে প্রবাসে পা রাখছে!! তার তো এখন গভীর ঘুমে স্বপ্নে দেখা উচিৎ ছিল কাল স্কুলে গিয়ে দুষ্টুমির খুনসুটি গুলো ;
সকালে বেহায়াপনা আর দিনভর উদ্দীপনায় কাটানোর কথা ছিল ;
দারিদ্রতায় হয়ত তাকে এই নিয়তি দিয়েছে তাই বলে ১৫ বছরেই? তার বাবাকে হয়ত গালি দিব!! কিন্তু তার কি করার ছিল? ভালো কে না থাকতে চায়? ৩বেলা আহার কার কাম্য নয়?
একটু ভালো থাকার জন্যই হয়তো নিজের সব সম্বল শেষ করে এতটা নির্দয় হয়ে এত বড় সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে; স্বার্থপর হয়ে তার ভবিষ্যৎটা চিন্তা করেছেন; যদি কপাল ভালো হয় তো প্রবাস জীবনে এই ১৫ বছরেই খুঁজবে জীবকার সূত্র কাধে যে রয়েছে ঋনের লাখ টাকা ; ছোট বোনটার আবদার কিনবে লাল রঙের নেইল পালিশ..; বাবা চেয়েছে কিনবে একটা রিকশা……. ; মা হয়তো চেয়েছে ছেলেটা ভালো থাকুক! কিন্তু এত দায়িত্বে ভর করে ১৫ বছরেই ইতিহাস কি বদলে দেওয়া যায়? হয়ত!!
প্রবাসের কপাল যদি খারাপ হয় তাহলে? ঋনের বোঝা মাথায় নিয়ে পরিবারের শেষ আশ্রয়টা হবে কোন রাস্তায়!!!
ধ্বংস হবে একেকটা স্বপ্ন একেকটা পরিবার ;
১৫ বছরেই এমন যোদ্ধা হবার ইতিহাস রচিত হবে না; হয়তো লাশ টাও ফিরবে না মায়ের বুকে…….. ;
ফটিকেরা এভাবেই হারিয়ে যায়…..