লাইফে যেকোন সময় স্মার্টফোন হাতে আসার সাথে সাথে মনে করি আমরা খুব স্মার্ট হয়ে গিয়েছি।
মনে মনে ভাবি সামান্য ৫.৫ ডিসপ্লেতে পুরো পৃথিবী আমাদের হাতের মুঠোয়৷
যেখানে খুশি এক নিমিষেই যেতে পারি৷
আমাদের চোখের সামনে সব ভেসে উঠে এক পলকেই৷।
.
আসলে ব্যাপারটা কি তাই? যেদিন থেকে স্মার্টফোন আমাদের হাতে এসেছে সেদিন থেকেই আমরা হয়ে গেছি অসামাজিক৷ আমরা অসামাজিক হয়ে গেছি কারণে, অকারণে, উঠতে, বসতে, খেতে, ঘুমাতে৷।
.
আমরা অসামাজিক হয়ে গেছি সম্পর্কে৷ প্রতিটা সম্পর্ক এক ক্লিকে যেভাবে শুরু হয়, ঠিক অন্য ক্লিকে সেভাবেই শেষ হয়। আমাদের আবেগকে কেড়ে নিয়ে বিবেককে পথে বসিয়েছে৷ নষ্ট হয়ে গেছে আমাদের বিশ্বাস৷ কাউকে “ভালোবাসি” বলে আবার অন্য ট্যাব খুলে অন্য কাউকেও এটা কপি পেস্ট করে দিচ্ছি৷
.
আমরা অসামাজিক হয়ে গেছি খেতে বসেও৷ টাকা খরচ করে এখন আর রেস্টুরেন্টে খেতে যাই না। যাই শুধু ছবি তুলতে৷ পেটে ক্ষুধা রেখে আগে ছবি তুলি৷ তারপর শখানেক ছবির ভীড়ে হারিয়ে যায় আমাদের স্বাদ৷ সেগুলো আপলোড করতে হয় ফেসবুকে। না হলে মানুষ জানবে কি করে আমি যে এখানে বসে খাচ্ছি?
.
আমরা অসামাজিক হয়ে গেছি শুভেচ্ছায়৷ স্মার্টফোন আসার আগে আমরা ঈদ, পূজা এমনকি বিভিন্ন স্পেশাল দিনগুলির শুভেচ্ছা দিতাম রঙ বেরঙের কার্ডে করে৷ আর এখন সেটা হয় গুগল থেকে নামানো নতুন ওয়ালপেপার আর নেট থেকে ডাউনলোড করা ছোট্ট Mp3 দিয়ে। আমরা এখন আর কারোর জন্মদিন ডায়েরীতে লিখে রাখি না। এমনকি মনেও রাখি না৷ কারণ ফেসবুকের নোটিফিকেশন আমাদের বলে দেয় আজ অমুকের জন্মদিন৷
.
আমরা হাসতে ভুলে গেছি প্রিয়জনদের সামনে৷ আমরা হাসতে শিখেছি সেলফিতে৷ কৃত্রিম হাসি হেসে আমরা অসামাজিকতায় ভেসে গেছি৷ যে হাসি আমরা ক্যামেরার সামনে হাসি, সেটা যদি আমাদের প্রিয়জনদের সামনে হাসতাম তাহলে হয়তো অনেক সম্পর্ক ভেঙ্গে যেত না কাঁচের মত।।
.
আমাদের হাসি, কান্না, আবেগ, মন খারাপ সবকিছু এখন সীমাবদ্ধ ফোনের ইমোজিতে৷ ওপাশের হাসির ইমো দেখলে বুঝি মানুষটা হ্যাপি৷ কেউ কান্নার ইমো দিলে বুঝি তার মন খারাপ৷ অথচ ইমোগুলো থেকে বড় বেশি দরকার কাছে গিয়ে পিঠের উপর বা মাথায় আদর করে দেওয়া। সাহস করে বুকে জড়িয়ে ধরা।।
.
আমরা অসামাজিক হয়ে গেছি সেদিনিই, যেদিন আমরা কথা মুখে বলি না। যা বলি দুহাতের আঙুলে৷ শতশত চ্যাটের ভিড়ে কেউ কারও মিষ্টি গলা শোনার সময় নেই। বর্তমানে ফোনে কথা বলা আর দুহাতে চ্যাট করাই হচ্ছে আমাদের বিনোদন। হয়তো আজ দুহাতের বৃদ্ধ আঙুল গুলোও বৃদ্ধ হয়ে গেছে৷।
.
আমরা অসামাজিক হয়ে গেছি বন্ধুদের আড্ডায়। যেখানে কথা আর হই হুল্লোড় না করে ডুবে গেছি অনলাইন গেমে৷ কে কত স্কোর করলো, কে কতটা যুদ্ধে জিতলো সেটা নিয়ে মেতে থাকি। অথচ বাস্তব যুদ্ধে যে হেরে যাচ্ছি সে খবর আর কে রাখে।।
.
আমরা অসামাজিক হয়ে গেছি সবকিছুতেই। আগে মানুষ জ্যোৎস্না দেখে কবিতা লিখতো। আর এখন মানুষ জ্যোৎস্না দেখে স্ট্যাটাস লিখে। অবসরে কিংবা রাতে লোডশেডিং হলে মানুষ আগে বাড়ির উঠানে বা ছাদে বসে গল্প করতো। আর এখন ভার্চুয়াল চ্যাটের কারণে পরিবারের সাথে কিছু সময় গল্প করার প্রয়োজন বোধ করি না। আমরা এখন হয়ে গেছি প্রযুক্তি মানব।।
.
স্মার্টফোনে আমরা যতটা না উপকৃত হচ্ছি তার থেকে আমরা হারাচ্ছি বেশি৷ হয়তো আমরা বুঝতে পারি, হয়তো পারি না। হয়তো টের পাচ্ছি, হয়তো পাই না৷।
বাকিটা আপনার বিবেচনা;